লর্ড কারমাইকেল
লর্ড কারমাইকেল(১৮৫৯-১৯২৬)ছিলেন
বঙ্গ-ভঙ্গ রদ ও গভর্নর শাসিত প্রদেশ হিসেবে রূপান্তরিত হওয়ার পর বাংলার প্রথম
গভর্নর(১৯১২-১৯১৭। তিনি
এডিনবার্গে, ১৮৫৯
সালের ১৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জনস্ কলেজে লেখাপড়া
শেষ করে জর্জ ট্রেভেলিয়ান ও লর্ড ডালহৌসী-র একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেন এবং
এঁদের দুজনের কাছ থেকে রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৮৯৫ থেকে ১৯০০
সাল পর্যন্ত তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে মিডলটন-এর প্রতিনিধিত্ব করেন। বাংলার
গভর্নর হওয়ার আগে তিনি ভিক্টোরিয়া (অস্ট্রেলিয়া, ১৯০৮-১১) ও মাদ্রাজের (১৯১১-১২) গভর্নর ছিলেন।
রাজনৈতিক
কর্মজীবন
জর্জ ট্রেভেলিয়ান এবং লর্ড ডালহৌসী
স্কটল্যান্ডের সচিব থকাকালিন সময়ে কারমাইকেল তাদের একান্ত সচিব ছিলেন। উইলিয়াম
এওয়ারথ গ্ল্যাডস্টোনের সাথে তিনি ১৮৯২ সালে 'পেব্বলস' এবং 'সেক্রিকে' প্রতিদ্বন্দিতায় পরাজিত হন কিন্তু
১৮৯৫ সালে মিডলোথেইনের লিবারেল সংসদ সদস্য হিসেবে বিজিত হয়ে ফিরে আসেন। তিনি ১৯০০
সালে সাধারণ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এই আসনে প্রতিনিধিত্ব অব্যাহত রেখে ছিলেন।
তিনি গভর্নর শাসিত প্রদেশ হওয়ার সুবাদে
বাংলার গভর্নর স্বশাসনের অধিকার নিয়ে সরাসরি ইন্ডিয়া কাউন্সিল দ্বারা নিযুক্ত হয়েছেন।
গভর্নরকে পরামর্শ দান ও নির্বাহি দায়িত্ব পালনের জন্য একটি নির্বাহী সভা (executive
council) ছিল।
১৯১৩ সালে লেজিস্লেটিভ কাউন্সিলের (legislative council) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তিন সদস্য
বিশিষ্ট এগজিকিউটিভ কাউন্সিল-এ একজন স্থানীয় প্রতিনিধি নেওয়া হয়। প্রশাসনের
দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বাংলায় একজন চীফ সেক্রেটারি ও একজন সেক্রেটারিও এসময় ছিল।
যে পরিস্থিতিতে বাংলাকে ভাগ করা হয়
এবং পরে আবার তা রদ করা হয়, সে সম্পর্কে লর্ড কারমাইকেল সম্পূর্ণ সচেতন
ছিলেন। গোটা ব্যাপারটি যে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে, তা-ও তিনি জানতেন। বঙ্গ-ভঙ্গ রদের ফলে
মুসলিম নেতৃত্বের যে-সঙ্কট দেখা দেয়, সে বিষয়েও তিনি ওয়াকিবহাল ছিলেন। তার
কার্যকালে বছরে এক কিংবা দুমাসের জন্য
ঢাকা প্রদেশের সদর দপ্তরে রূপান্তরিত হতো।
ঔপনিবেশিক প্রশাসক
বছরে একবার তিনি পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলি
সফর করতেন। ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে তিনি আন্তরিক ছিলেন।
যুদ্ধের কারণেই তাঁর এ পরিকল্পনা সফল হয়নি। তবে পরিকল্পিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য
প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সৃষ্টির দায়িত্ব দিয়ে ঢাকায় তিনি একটি বিশেষ ‘পাবলিক
ওয়ার্কস্ ডিভিশন’ স্থাপন করেছিলেন। প্রদেশের মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার
সংক্রান্ত বিষয়ে তদারকির জন্য তিনি পাঁচজন বিশেষ পরিদর্শক নিয়োগ করেছিলেন।
মুসলমান ছাত্রদেরকে শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য তিনি ‘নিউ স্কীম মাদ্রাসা’
প্রবর্তন করেন। এ ব্যবস্থায় ইসলামি শিক্ষা ও ইংরেজি উভয়ই পড়ানো হতো। মুসলমানদের
মধ্যে শিক্ষাবিস্তারে এ পরিকল্পনা অত্যন্ত সফল হয়েছিল।
লর্ড কারমাইকেল-এর অধীনে প্রশাসনিক
ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় জাতীয়তাবাদীরা বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত না হলে
ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষ বাংলাকে ভাগ না করে বরং তাকে গভর্নরের প্রদেশে রূপান্তরিত
করতে পারতো। তবে এ-কথাও সত্য যে, একদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতি, অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান বিপ্লবী
কর্মকান্ড, পাটের
বাজারে মন্দা ও রবিশস্যের ক্রমাগত হানির ফলে মূল্যবৃদ্ধির কারণে লর্ড কারমাইকেল-এর
প্রশাসন যথেষ্ট সমালোচনার শিকার হয়। অবশ্য লর্ড কারমাইকেল তাঁর দৃঢ় প্রচেষ্টার
গুণে কোন বড় ধরনের বিপর্যয় রোধ করতে সমর্থ হন।
তিনি ১৯০৮ সালে Knight
Commander of the Order of St Michael and St George, ১৯১১ সালে Knight
Grand Commander of the Order of the Indian Empire এবং ১৯১৭ সালে Knight
Grand Commander of the Order of the Star of India সম্মাননা লাভ করেন।
ব্যক্তিগত জীবন
তিনি ১৯২৬ সালের জানুয়ারী মাসে, ৬৬ বছর বয়সে-১৩, পোর্টম্যান স্ট্রিট, লন্ডনে মারা যান এবং লানার্কসায়ারের
স্কির্লিংবিগারে সমাহিত করা হয়। তাদের কোনো সন্তান-সন্ততি ছিল না। তাই তার
মৃত্যুর পর ব্যারন খেতাবের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং তার চাচাতো ভাই হেনরি টমাস
গিবসন-ক্রেগ ব্যারনেটের খেতাবে স্থলাভিষিক্ত হন।
তার নামে বাংলাদেশের রংপুরে কারমাইকেল
কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এর প্রতিষ্ঠাতা।
Comments
Post a Comment